স্বদেশ ডেস্ক:
সম্মেলনে চমক আসছে এমন বক্তব্য শোনা গেলেও আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনে তেমন কোনো চমক দেখা যায়নি। গতকাল শনিবার কাউন্সিল অধিবেশনে যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে বড় রকমের কোনো রদবদল দেখা যায়নি। বরং পুরনোরাই ঘুরেফিরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে এসেছেন।
কাউন্সিলে শেখ হাসিনা নবমবারের মতো সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন। পরে নতুন কমিটির সভাপতিম-লী ও উপদেষ্টা পরিষদসহ বিভিন্ন সম্পাদক পদে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কাউন্সিল অধিবেশন ঘিরে যে আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল, কমিটি ঘোষণার পর সম্মেলন প্রাঙ্গণে সমবেতদের মধ্যে বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। সেখানে ঝালকাঠির এক নেতা বলেন, তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নিতে দ্বিধা নেই তাদের। কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে দলের মধ্যেই শুদ্ধি অভিযান চলার সময়ে পরিবহন সেক্টরের বিতর্কিত নেতা শাজাহান খানকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কেন জায়গা দেওয়া হলো তা বোধগম্য হয়নি তার।
আওয়ামী লীগের প্রায় ১৫টি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের এমন দুজন নেতা আমাদের সময়কে জানান, আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানে ইতিহাস-ঐতিহ্য, উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সংমিশ্রণ এবং টানটান উত্তেজনা। কমিটির ঘোষণার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এবারেও টানটান উত্তেজনা ছিল। সম্মেলনের আয়োজনেও ঘাটতি ছিল না। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর সবকিছু যেন গতানুগতিক ধারায় রূপ নিল। কাউন্সিল অধিবেশনে থাকে দলীয় দ্বন্দ্ব অবসানের প্রচেষ্টায় তৃণমূল নেতাদের কড়া বক্তব্য। এবার সেটিও দেখা যায়নি।
কাউন্সিল সভায় বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী, রাজশাহী জেলা সভাপতি মেরাজ মোল্লা, খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী,
পটুয়াখালী জেলা সভাপতি কাজী আলমগীর, সিলেট মহানগর সভাপতি মাসুদ উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা উত্তর সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও বান্দরবন জেলা সভাপতি ক্য শৈ হ্লা মারমা। তাদের বক্তব্যে দলের চেয়ে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথাই ঘুরেফিরে এসেছে। অনেকে এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি জানান।
কাউন্সিল অধিবেশনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। এতে বহুল বিতর্কিত দলের সহ-সম্পাদক পদ বিলুপ্ত করা হয়। ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর নাম পাল্টে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ করা হয়েছে। মৎস্যজীবী লীগকে দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জেলা উপজেলা কতজন উপদেষ্টা থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলের ঘোষণাপত্রে জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের নিজস্ব অফিস করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। অধিবেশন পরিচালনা করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দুপুর ১টার দিকে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
গতকাল সন্ধ্যায় নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন। তাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃবৃন্দও ছিলেন। যার যার জায়গা থেকে দলের জন্য কাজ করতে শেখ হাসিনা তাদের নির্দেশনা দেন।
নতুন কমিটির সভাপতিম-লী
নতুন কমিটির সভাপতিম-লীতে বহাল রয়েছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্যা, সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আব্দুল মান্নান খান ও আব্দুল মতিন খসরু। নতুন যুক্ত হয়েছেন আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান এবং সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
উপদেষ্টা পরিষদ
এবারের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ জন করা হয়েছে। গতকাল দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, এ পরিষদের আগের সবাই বহাল রয়েছেন। বর্ধিত পদে নাম পরে ঘোষণা করা হবে। আগের কমিটির উপদেষ্টারা হলেন-
এস এ মালেক, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রহমত আলী, এইচ টি ইমাম, মসিউর রহমান, আলাউদ্দিন আহমেদ, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, রাজীউদ্দিন আহমেদ রাজু, মহীউদ্দিন খান আলমগীর, শফিক আহমেদ, সৈয়দ আবু নসর, সতীশ চন্দ্র রায়, আব্দুল খালেক, রুহুল হক, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কাজী আকরাম উদ্দীন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, অনুপম সেন, হামিদা বানু, হোসেন মনসুর, সুলতানা শফি, এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, মো. জমির, গোলাম মওলা নকশাবন্দি, মির্জা এমএ জলিল, প্রণব কুমার বড়ুয়া, আব্দুল হাফিজ মল্লিক, সাইদুর রহমান খান, গওহর রিজভী, খন্দকার বজলুল হক, রশিদুল আলম, ইয়াফেস ওসমান, কাজী সিরাজুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, বাসেত মজুমদার, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, মুকুল বোস, সালমান এফ রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান ও জয়নাল হাজারী।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
আগের কমিটির মাহবুব-উল আলম হানিফ ও দীপু মনি স্বপদেই রয়েছেন। নতুন এসেছেন আগের কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং আগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সম্পাদকম-লী
স্বপদে রয়েছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুর সবুর ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। বাকি সম্পাদক পদগুলোর মধ্যে আইন সম্পাদক হয়েছেন আগের কমিটির সদস্য নজিবুল্লাহ হিরু, দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন আগের কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন আগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন প্রথমবারের মতো কমিটিতে স্থান পাওয়া মেহের আফরোজ চুমকি। কাউন্সিল থেকে অর্থ, তথ্য ও গবেষণা, ধর্ম, শিল্প ও বাণিজ্য এবং শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের নামও ঘোষণা করা হয়নি।
গত কমিটিতে আইন সম্পাদক ছিলেন গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা, বাণিজ্যে টিপু মুনশি, তথ্য ও গবেষণায় আফজাল হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সাত্তার এবং শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন হাবিবুর রহমান সিরাজ।
সাংগঠনিক সম্পাদক
আগের কমিটিতে এ পদে ছিলেন আটজন। গতকাল ঘোষণা করা হয় পাঁচ জনের নাম। আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন স্বপদেই রয়েছেন। নতুন যোগ হয়েছেন আগের কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজম। আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহউদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নাম এবার কোনো পদেই আসেনি।